-->
আফগান যুদ্ধের দায় যাঁদের

আফগান যুদ্ধের দায় যাঁদের

 

কাবুলের রাস্তায় তালেবানের টহল এএফপি ফাইল ছবি

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত সপ্তাহে যা বলেছেন, তা চার মাস ধরে বারবারই বলে আসছিলেন। তা হলো, আফগানিস্তানের যুদ্ধকে পঞ্চম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের হাতে তুলে দিতে চান না তিনি। যার অন্তর্নিহিত অর্থ, ২০ বছর আগে যুদ্ধ শুরুর পর এখন এটি টেনে নিয়ে যাওয়া তাঁরও উচিত নয়। খবর সিএনএনের।

আফগানিস্তানে কথিত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের নামে ২০০১ সালে আগ্রাসন শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানে যে দীর্ঘ লড়াই–সংঘাতের শুরু, তাতে চারজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেদের জড়িয়েছেন। এর ফলাফল হাজার হাজার বেসামরিক আফগান ও মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অসংখ্য মানুষ।

একই সঙ্গে এ যুদ্ধ ছিল দেশটির রাজনৈতিক নেতৃত্বের উন্নতি ঘটানোর এক হতাশাজনক ব্যর্থ চেষ্টা। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের আগ্রাসী অভিযানের মুখে শুরুর দিকে (২০০১) তালেবান সরকারের পতন ঘটে। কিন্তু দুই দশক পর সেই তালেবানই আবার ক্ষমতায়।

                                                              বিজ্ঞাপন

প্রেসিডেন্ট বাইডেন আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যায় বলেছেন, এটির প্রয়োজন ছিল। কারণ, যে উদ্দেশ্যে আফগান যুদ্ধের শুরু, তা এত বছর পর ফিকে হয়ে এসেছে। তা ছাড়া এভাবে সেনা সরিয়ে নেওয়ার পেছনে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তালেবানের স্বাক্ষরিত চুক্তির কথা তুলে ধরেন তিনি। গত সপ্তাহে তিনি বলেছেন, মার্কিন সেনা ও তাঁদের সহায়তাকারী আফগানদের সরিয়ে নেওয়া নিয়ে যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে, তা এক রকম অনুমেয়ই ছিল। এমনকি তা ঠেকানো হয়তো অসম্ভব ছিল।


আফগান যুদ্ধে হাজারো বেসামরিক নাগরিক এবং আফগান ও মার্কিন সেনার প্রাণহানি ঘটেছে। আহত হয়েছে অসংখ্য মানুষ। আফগানিস্তানে রাজনৈতিক নেতৃত্বের উন্নতি ঘটাতে যুক্তরাষ্ট্রের এক হতাশাজনক ব্যর্থ চেষ্টাও ছিল এ যুদ্ধ।


আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী কীভাবে ২০টি বছর পার করল, আর তালেবানই বা কীভাবে চোখের পলকে পুরো দেশের ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করল, তা দশকের পর দশক ঐতিহাসিকদের জন্য চিন্তার খোরাক হয়ে রইবে। এই দীর্ঘ যুদ্ধে ব্যাপক প্রাণহানি, অর্থের অপচয়, রাজনৈতিক ব্যবস্থার উন্নয়ন না হওয়া, সংঘাতের অবসান না ঘটা—এসবের জন্য দায়ী কে, সে উত্তর খোঁজাও এক জটিল বিতর্কের বিষয় হয়ে থাকবে।

যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘতম এই যুদ্ধে চার মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভূমিকা কী ছিল, সে সম্পর্কে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:


জর্জ ডব্লিউ বুশ

জর্জ ডব্লিউ বুশ
জর্জ ডব্লিউ বুশ

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্র আফগানিস্তানের ঘাঁটি থেকে আল-কায়েদা করেছে এমন অভিযোগ ওঠে। তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বিশ্ব থেকে সন্ত্রাসবাদ উচ্ছেদের অঙ্গীকার করেন।

ওই সময় আফগানিস্তানের শাসকগোষ্ঠী তালেবানকে আল–কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনসহ সংগঠনটির লুকিয়ে থাকা নেতাদের যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান বুশ। তালেবান এ আহ্বান নাকচ করে দিলে আফগানিস্তানে যুদ্ধের পরিকল্পনা করেন তিনি। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০০১ কংগ্রেস মার্কিন বাহিনীকে দেশটিতে পাঠানোর পরিকল্পনায় অনুমোদন দেয়।

দুই দিন পর কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে বুশ বলেন, অতীতে মার্কিনরা দেখেননি এতটা দীর্ঘ হতে পারে এই যুদ্ধ। এ যুদ্ধ আর কত দীর্ঘ হতে পারে, সে বিষয়ে বুশ আজও কোনো ধারণা দিতে পারেননি। ইতিমধ্যে ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের শুরু করা ‘অপারেশন এনডিউরিং ফ্রিডম’ নামের এ যুদ্ধে যোগ দেয় মিত্র যুক্তরাজ্যসহ ন্যাটো দেশগুলো।


বিশ্ব থেকে আরও পড়ুন...

তালেবানের হাতে মার্কিন বাহিনীর বায়োমেট্রিক প্রযুক্তি



বারাক ওবামা

বারাক ওবামা
বারাক ওবামা

২০০৯ সালে হোয়াইট হাউসে বসেন বারাক ওবামা। বুশের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া এই যুদ্ধের ভবিষ্যৎ ও পরিকল্পনা নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মুখোমুখি হন তিনি। তাঁর শীর্ষ জেনারেলরা সুপারিশ করেন তালেবানকে দুর্বল করতে আফগানিস্তানে আরও মার্কিন সেনা পাঠানোর। তবে তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এর বিরোধিতা করেন।

ভাইস প্রেসিডেন্টের বিরোধিতা উপেক্ষা করে আফগানিস্তানে আরও হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করেন ওবামা। একই সঙ্গে আফগানিস্তান থেকে ২০১১ সালের মধ্যে মার্কিন সেনা ফিরিয়ে নেওয়ার এক সময়সূচি রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। ২০১০ সালের আগস্টের মধ্যে সে দেশে মোতায়েন মার্কিন সেনার সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্যে জানা যায়, আল–কায়েদা প্রধান আছেন ভিন্ন একটি দেশে—পাকিস্তানে। পরে ২০১১ সালের মে মাসে মার্কিন নেভি সিল সদস্যরা পাকিস্তানের ভেতরে অভিযান চালিয়ে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করেন।

ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার পরের বছরগুলোতে ধীরে ধীরে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনার উপস্থিতি কমিয়ে আনা শুরু হয়। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান যুদ্ধ মিশনের পরিসমাপ্তি টানার ঘোষণা দেন। ওবামা তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা শেষ করার আগে দেশটিতে ১০ হাজারের মতো সেনা রেখে যান।

ডোনাল্ড ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাদের দেশে ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার করেন তিনি। কিন্তু তালেবানের ধীরে ধীরে উত্থান ও আইএসের শাখার তৎপরতায় তাঁর এ সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়ে। ২০১৭ সালের আগস্টে এক বক্তৃতায় বিষয়টি তিনি স্বীকার করেন। যুদ্ধের ইতি টানতে পরের বছর তিনি তালেবানের সঙ্গে সমঝোতা প্রক্রিয়া শুরু করার দায়িত্ব দেন বিশিষ্ট আফগান–আমেরিকান কূটনীতিক জালমে খলিলজাদকে।
এ প্রক্রিয়ায় দুই পক্ষের মাঝে চলা আলোচনা থেকে অনেকটাই ছিটকে পড়ে প্রেসিডেন্ট আফগান গনির সরকার। শান্তিপ্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে চুক্তি হয়। চুক্তিতে চলতি বছরের ৩১ আগস্টের মধ্যে সব বিদেশি সেনা সরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়। বিনিময়ে বিদেশি সেনাদের ওপর হামলা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেয় তালেবান। গত মে মাসে শুরু হয় সেনা প্রত্যাহারের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া।


জো বাইডেন

জো বাইডেন
জো বাইডেন

২০২১ সালের জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর জো বাইডেন তাঁর যুদ্ধবিরোধী নীতি কার্যকর করার ব্যাপারে অনড় থাকেন। লক্ষ্যহীন আফগান যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাতে ট্রাম্পের করা চুক্তি অনুযায়ী আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের চূড়ান্ত প্রক্রিয়াটি শুরু করেন।

0 Response to "আফগান যুদ্ধের দায় যাঁদের"

Ads on article

Advertise in articles 1

advertising articles 2

Advertise under the article